নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ পিএম | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ পিএম

সিরিয়ার নতুন শাসক গোষ্ঠী জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থকরা দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ১৪ জন সেনাসদস্যকে হত্যা করেছে।তারা জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী শহর তার্তুসেও এক সংঘর্ষ হয়েছে।সেখানে আরও ১০ জন সেনা সদস্য আহত হয়েছেন।ওই অঞ্চলটি বাশার আল-আসাদের সংখ্যালঘু আলাউইতি মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি ঘাঁটি।

 

বাশার আল-আসাদের পতনের পর আসাদপন্থী অনুগতদের সঙ্গে সিরিয়ার ডি-ফ্যাক্টো নেতা আহমাদ আল-শারা'র অনুসারীদের এটিই প্রথম সরাসরি সংঘর্ষ।দুই সপ্তাহ আগে বাশার আল-আসাদের সুদীর্ঘ শাসনামলের পতন ঘটানোর আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় আহমেদ আল-শারা'র হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)।আহমেদ আল-শারা আগে আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি নামে পরিচিত ছিলেন।

 

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার(২৬ ডিসেম্বর) তার্তুস প্রদেশে "নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য" একটি অভিযান শুরু হয়েছে।সানা জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী আসাদপন্থী কয়েকজনকে প্রতিরোধ করেছে এবং তারা এখন তার্তুসের প্রান্তিক এলাকাগুলোতেও বাকিদের খুঁজছে।

 

প্রতিবেদনগুলো বলছে, নিরাপত্তা বাহিনী এর আগে যখন দেশটির রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী নামকরা সাইদনায়া কারাগারের একজন প্রাক্তন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছিলো, তখনও তারা একটি অ্যামবুশের শিকার হয়েছিলো।যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সংঘর্ষে তিনজন সশস্ত্র ব্যক্তিও নিহত হয়েছেন, তবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

 

সংস্থাটি আরও জানায়, নিরাপত্তা বাহিনী পরে সেখানে আরও শক্তি মোতায়েন করে।গতকাল বৃহস্পতিবার, তারা এও জানায় যে প্রাক্তন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কানজো হাসানসহ মোট ২০ জনকে একযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানিয়েছে যে আরেকটি পৃথক ঘটনায় হোমস শহরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

 

প্রতিবেদনগুলো বলছে, আলাউতি মাজারে আক্রমণ করা হচ্ছে, এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তা নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ওই ফুটেজটি পুরনো এবং গত নভেম্বর মাসে আলেপ্পো শহরে বিদ্রোহীদের আক্রমণের সময়ের এবং ওই সহিংসতা অজানা কোনও গোষ্ঠী করেছে।সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, হোমসে একজন বিক্ষোভকারী নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন।ফলে সিরিয়ার বর্তমান সরকার, যারা একসময় বিদ্রোহীর ভূমিকায় ছিল, দেশে নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা আনতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

 

তবে সিরিয়ানরা আশা করছে যে এই সরকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা করবে এবং আল-আসাদের শাসনামলে তারা যাদের হারিয়েছেন, সেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।তার্তুস এবং লাতাকিয়া শহরসহ আলাওয়ি-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে, এমনকি আসাদের নিজ শহর কারদাহায়ও।

 

আলাউইতি সম্প্রদায় মূলত শিয়া ইসলামের একটি শাখা। অনেক অভিজাত শ্রেণীর রাজনৈতিক ও সামরিক সদস্য এই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।খোদ আল-আসাদ পরিবারও এই সম্প্রদায় থেকে এসেছে। তাই,এই সম্প্রদায়ের সবাই এখন প্রতিশোধের ভয়ে রয়েছে।প্রাক্তন কর্মকর্তারা অস্ত্র সমর্পণ করতে অস্বীকার করছে।সেইসাথে,দেশটির কোনও কোনও শহরের স্থানীয়রা তার্তুসের ঘটনার মতো লড়াই করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

 

এদিকে আলাউইতি'র ধর্মীয় নেতারা আলাউইতিদেরকে সাধারণ ক্ষমার আহ্বান জানিয়েছে। যদিও ক্ষমা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ তাদের অনেকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আছে।যদিও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আল-শারা আলাউইতি শহর এবং গ্রামগুলিতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।এই অবস্থায় আসাদপন্থীদের গ্রেফতারের জন্য তার বাহিনী যদি অভিযান চালায়, তাহলে তা এই ভঙ্গুর দেশটিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

 

সিরিয়ার কারাগারগুলোতে লক্ষাধিক মানুষকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে এবং হাজার হাজার পরিবার এখনও হত্যার কারণ জানার জন্য ও ন্যায়বিচারে আশায় অপেক্ষা করছে।সিরিয়ানদের দাবি, দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক।এই দাবি-ই মূলত আলাউইতিদের আতঙ্কের মূল কারণ।আসাদের ৫০ বছরের শাসনের অবসান ঘটায় এইচটিএস-এর নেতৃত্বাধীন আক্রমণ, যা সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চল থেকে শুরু হয়ে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে।তাদের তোপের মুখেই বাশার আল-আসাদ সপরিবারে রাশিয়ায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

 

এইচটিএস সেসময় সিরিয়ায় বিভিন্ন ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।যদিও জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ একে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।গত মঙ্গলবার দেশটিতে একটি ক্রিসমাস ট্রি পোড়ানোর ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয় এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় নতুন শাসকদের আরও তৎপর হওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মহাবিশ্বের সুদূর পারে মিলল অতিকায় মহাসাগরের সন্ধান
না ফেরার দেশে সুজুকি কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান ওসামু সুজুকি
প্রথম উভচর অ্যাসল্ট জাহাজ উদ্বোধন চীনে
মাত্র ২ ডলার টিপস দেয়ায় গর্ভবতী মহিলাকে ১৪ বার ছুরিকাঘাত
ইরাকে গণকবরে ১০০ কুর্দি নারী ও শিশুর লাশের সন্ধান
আরও

আরও পড়ুন

জুলাই হতাহতের বিচার আদৌ হবে কিনা সংশয় স্বজনের মধ্যে

জুলাই হতাহতের বিচার আদৌ হবে কিনা সংশয় স্বজনের মধ্যে

হরিণাকুন্ডুতে যুবদল সভাপতির উপর গুলি অল্পের জন্য রক্ষা

হরিণাকুন্ডুতে যুবদল সভাপতির উপর গুলি অল্পের জন্য রক্ষা

সচিবালয়ে আগুন, টঙ্গী হত্যাকাণ্ড ও ইসকনের আস্ফালন একই সূত্রে গাঁথা : যুব সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক

সচিবালয়ে আগুন, টঙ্গী হত্যাকাণ্ড ও ইসকনের আস্ফালন একই সূত্রে গাঁথা : যুব সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে :পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে :পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সেই সুখরঞ্জন বালির ভারতে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী

সেই সুখরঞ্জন বালির ভারতে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী

খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন শাস্তি হলে হাসিনার সুযোগ নেই :অ্যাটর্নি জেনারেল

খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন শাস্তি হলে হাসিনার সুযোগ নেই :অ্যাটর্নি জেনারেল

থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

হাসিনা-জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই

হাসিনা-জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন

সংস্কারের সঙ্গেই নির্বাচন প্রস্তুতি

সংস্কারের সঙ্গেই নির্বাচন প্রস্তুতি

‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প সোলার সিস্টেম চালু করুন’

‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প সোলার সিস্টেম চালু করুন’

আসিফ মাহমুদের হেলিকপ্টারে ছয় দিনে ২৮ বার সফর বিতর্ক

আসিফ মাহমুদের হেলিকপ্টারে ছয় দিনে ২৮ বার সফর বিতর্ক

বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম

বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম

ডেঙ্গুতে মৃত্যুহীন ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫৩

ডেঙ্গুতে মৃত্যুহীন ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫৩

নববর্ষ উদযাপনে ৭ বছরে শব্দদূষণ বেড়েছে ৭৪ শতাংশ

নববর্ষ উদযাপনে ৭ বছরে শব্দদূষণ বেড়েছে ৭৪ শতাংশ

হাসিনা পরিবারের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরুর পরই সচিবালয়ে আগুন : রিজভী

হাসিনা পরিবারের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরুর পরই সচিবালয়ে আগুন : রিজভী

হাসিনার ফ্যাসিজম নিয়ে সস্তা কথা টিকবে না : শফিকুল আলম

হাসিনার ফ্যাসিজম নিয়ে সস্তা কথা টিকবে না : শফিকুল আলম

চাঁদপুর মেঘনায় ড্রেজারসহ ২৮ জন আটক

চাঁদপুর মেঘনায় ড্রেজারসহ ২৮ জন আটক

ব্যাট হাতেও উজ্জ্বল অভিষিক্ত বশ,চালকের আসনে দক্ষিণ আফ্রিকা

ব্যাট হাতেও উজ্জ্বল অভিষিক্ত বশ,চালকের আসনে দক্ষিণ আফ্রিকা

১৬ বছরের অভিনেতার অকাল প্রয়াণে হলিউডে শোকের ছায়া

১৬ বছরের অভিনেতার অকাল প্রয়াণে হলিউডে শোকের ছায়া